দেশের উপক’লভাগ যুড়ে দূর্যোগপূর্ণ মৌসুম শুরু হলেও নিরাপদ নৌযোগাযোগ ব্যাবস্থা প্রায় অনুপস্থিত। ফলে স্বাধিনতার ৫১ বছরেও উপক’লভাগের বিশাল জনগোষ্ঠীর জানমাল রক্ষার বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। অথচ দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপক’লভাগে নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ১৯৭২ সালের জানুয়ারীতে প্রেসিডেন্টের ১২ নম্বর আদেশে রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি গঠন করা হয়েছিল।
এমনকি উপক’লীয় নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই সরকারী অর্থায়নে ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৯ সালে ৪টি করে ১২টি নতুন সী-ট্্রাক সংগ্রহ করে সংস্থাটি। এর বাইরে বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে বিদ্যমান ৪টি উপক’লীয় নৌযানের দুটির পূণর্বাশন ছাড়াও ২০০২ সালে চীনা ঋনে আরো ১টি এবং গত বছর সরকারের নিজস্ব তহবিলে আরো দুটি উপক’লীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করে সংস্থাটি। উপরন্তু বিশ^ ব্যাংকের সুপারিশে উপক’লীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহনে পরিচালন ব্যায়ের ওপর ভতর্’কি হিসেবে সরকার প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটিকে ৫০ লাখ টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করে আসছে।
সরকারী সিদ্ধান্তনুযায়ী প্রতিবছর ১৬ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের উপক’লীয় এলাকাকে ‘ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এলাকা’ হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। এসময়ে ‘উপক’লীয় নৌযান হিসেবে বিশেষ কারিগরি ব্যাবস্থা সম্বলিত’ নিবন্ধিত ছাড়া অন্য কোন নৌযানের চলাচল উপক’লভাগে চলাচল নিষিদ্ধ।
কিন্তু এরপরেও ২০১১ সালের মধ্যভাগ থেকে বরিশালÑচট্টগ্রাম উপক’লীয় নৌপথে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। অথচ ২০০৯ সালে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে এ রুটের দুটি নৌযান পূণর্বাশন করা হয়। ইতোমধ্যে চীনা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট লাইনে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে ১টি নতুন উপক’লীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করার পরে ইতোমধ্যে দু দফায় মেরামত ও পূণর্বাশনে আরো প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে। উপরন্তু প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যায়ে গত বছর আরো দুটি নতুন উপক’লীয় নৌযান সংগ্রহ করা হয়েছে। বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটের কথা বলেই সরকারী অর্থে নতুন নৌযান সংগ্রহ সহ এসব নৌযানের মেরামত ও পূণর্বাশন করা হলেও ২০১১ সালে পরে আর এ রুটে যাত্রী পরিবহন পূণর্বহাল করেনি বিআইডব্লিউটিসি।
অপরদিকে বন্ধ হয়ে গেছে বরিশালÑভোলাÑলক্ষ্মীপুর এবং ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তি মির্জাকালুÑচর আলেকজান্ডার রুটের সীÑট্রাক সার্ভিস দুটিও। দেশের বিচ্ছিন্ন ব-দ্বীপ উপজেলা মনপুরার সাথে ২৪ ঘন্টায় একবার ইজারাদারের ইচ্ছায় যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে ‘এসটি শেখ কামাল’এর মাধ্যমে । বরগুনার চরদোয়ানীর সাথে পিরোজপুরের বড়মাছুয়া হয়ে বাগেরহাটের সণ্যাশী পর্যন্ত সীÑট্রাক সার্ভিসের মাধ্যমে অবহেলিত উপক’লীয় এলাকাটির সাথে রাজধানীর নিরাপদ নৌ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার দাবীও দীর্ঘদিনের।
এদিকে সংস্থাটির ১৪টি সী-ট্রাকের ৪টি বিক্রীর ব্যবস্থা চুড়ান্ত হয়েছে। অপর ১০টির মধ্যে ‘এসটি খিজির-৫’ ও এসটি-খিজির-৮’ ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট রুটে ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় চলছে। অভিযোগ রয়েছে খিজির-৮ সীÑট্রাকটি বরিশালÑভোলাÑলক্ষ্মীপুর রুটের জন্য ইজারা নিয়ে সংস্থাটির কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে তা বরিশালের পরিবর্তে ভোলা থেকে লক্ষ্মীপুর রুটে চালাচ্ছে ইজারাদার। এছাড়া ‘এসটি শেখ মণি’ হাতিয়াÑবয়ারচর রুটে ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় যাত্রী পরিবহন করছে বলে জানা গেছে।
এর বাইরে ‘এসটি-ভাষা শহিদ জব্বার’ চট্টগ্রামের কর্ণফ’লী ডকইয়ার্ডে মেরামতে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ‘এসটি-খিজির-৭’ ২০২০ সালের ১৪ আগষ্ট থেকে ভোলার একটি বেসরকারী নৌ কারাখানায় মেরামতের নামে পড়ে আছে । ‘এসটি শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত’ পাটুরিয়া ঘাটে গত ১০ ফেব্রুয়ারী থেকে পড়ে আছে। এছাড়া ‘এসটি ভাষা শহিদ সালাম’ ও ‘এসটি সুকান্ত বাবু’ নামের দুটি সী-ট্রাকও ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় এতদিন টেকনাফÑসেন্টমার্টিন রুটে চলাচলের পরে এখন কক্সবাজার ও টেকনাফে রয়েছে। এ দুটি সীÑট্রাকও সংস্থার হিসেবে ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাট রুটে যাত্রী পরিবহনের কথা রয়েছে।
ওয়াকিবাহল মহলের মতে, জনগনের অর্থে সংগ্রহ করা এসব সীট্রাকগুলো যথাযথ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমে সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালন করলে তা উপক’লভাগে নিরাপদ নৌ যোগাযোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারত।
এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র একাধীক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে আলাপ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা চেষ্টা করছি উপক’লীয় নৌযোগাযোগ আরো নিরাপদ করতে। ইচ্ছে থাকলেও নানা কারণে অনেক এলাকাতেই সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সী-ট্রাক সার্ভিস পরিচালন সম্ভব নয় বলে মত প্রকাশ করেন ঐসব কর্মকর্তা।