করেনা মহামারীতে বিগত দুটি বছর দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের নিকটজনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগের সুযোগ না হলেও পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবার সবাই ঘরে ফেরার মানুষিক প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাগুলোর কোন হেলদোল নেই। তবে বেসরকারি সড়ক, আকাশ ও নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে কর্ম পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বরিশালÑঢাকা রুটের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৯’এ গত সোমবারের রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। যদিও নৌ পরিবহন অধিদপ্তর ও তদন্ত প্রতিষ্ঠান পিবিআই’র অনুমোদন নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নৌযানটি মেরামত ও পূণর্বাশন করে যাত্রী পরিবহনে ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন পরিচালন প্রতিষ্ঠানটি। তবে ঈদের আগে তা যাত্রী পরিবহনে ফিরিয়ে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
তবে এর পরেও শুধু বরিশালÑঢাকাÑবরিশাল রুটেই প্রায় ২৭টি বেসরকারী নৌযান ঈদের আগে ও পড়ে যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুতি গ্রহন শুরু করেছে। এমনকি ঈদের আগের ৪ দিন ও পরবর্তী ৫দিন প্রতি দিনই দুটি করে ট্রিপে যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা রয়েছে বেসরকারী নৌযান মালিকদের। করোনা মাহামারী পূর্ববর্তি প্রতি বছরই ঈদ ও কোরবানীর সময় রাজধানী সহ সারা দেশ থেকে দশ লক্ষাধীক মানুষ দক্ষিণাঞ্চলে নিজ ঘরে ফিরতেন প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ উপভোগ করতে। এবার সে সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশাবাদী পরিবহন ব্যাবসায়ীগন। বরিশাল ছাড়াও পটুয়াখালী,ভোলা,পিরোজপুর,বরগুনা ও ঝালকাঠী থেকেও প্রতিদিন আরো অন্তত ৫০টি নৌযান রাজধানীর সাথে যাত্রী পরিবহন করবে বলে জানা গেছে।
এমনকি ইতোমধ্যে বরিশাল ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের অন্য জেলাগুলোর সাথেও ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সড়ক পথে ঘরমুখো যাত্রী পরিবহনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বাস মালিকগন। আকাশপথেও রাজধানীর সাথে বরিশাল সেক্টরে বিদ্যমান ৪টি ফ্লাইট দ্বিগুনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে বেসরকারী আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলো। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর তরফ থেকে এখনো কোন কর্ম পরিকল্পনাই গ্রহন করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় দপ্তরে কোন প্রস্তাবনাও দেয়নি বিমান-এর বরিশাল সেলস অফিস। তবে বুধবার বিষয়টি নিয়ে জেলা ব্যাবস্থাপকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি সব কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষা করে ঈদের আগে পড়ে বরিশাল সেক্টরে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনের প্রস্তাবনা দেবেন বলেও জানিয়েছেন।
তবে অত্যন্ত করুন অবস্থা রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান, বিআইডব্লিউটিসি’র। বিগত দুটি বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি’র অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন ব্যাবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। দুটি পরিচালন ব্যায়বহুল স্ক্রু-হুইল নৌযান সপ্তাহে মাত্র দুদিন করে চালিয়ে এসময়ে সংস্থাটি অন্তত ২০ কোটি টাকা লোকশান গুনেছে। এমনকি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রায় ৫৭ কোটি টাকায় সংগ্রহ করা ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নামের দুটি নৌযানে গত ৭/৮ বছরে সংস্তাটিকে অন্তত ৫০ কোটি টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে। অথচ ব্যায় সাশ্রয়ী ও যাত্রী বান্ধব ৪টি প্যাডেল হুইল জাহাজের সবগুলোই বন্ধ ছিল এসময়ে। তবে প্রায় দুবছর পরে মেরামত শেষে ‘পিএস মাহসুদ’ জাহাজটি সপ্তাহখানেক আগে ঢাকাÑচাঁদপুরÑবরিশাল-ঝালকাঠীÑপিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে। সংস্থাটির অপর প্যাডল হুইল জাহাজ ‘পিএস অস্ট্রিচ’ বিনা দরপত্রে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা দেয়ায় তা যাত্রী পরিবহনের বাইরে। ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ণ’ নামের অপর দুটি প্যাডেল হুইল যাত্রীবাহী নৌযানও বসিয়ে রাখা হয়েছে। এসব নৌযানের মূল ইঞ্জিন ও প্যাডেল ১৯৯৬ সালের পরে আর ওভারহলিং করা হয়নি। সবগুলো প্যাডেল হুইল নৌযান পরিপূর্ণ মেরামত ও পূণর্বাশন করলে তা আরো অন্তত ২০ বছর নির্বিঘেœ যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারিগড়ি বিশেষজ্ঞগন।
এমনকি আসন্ন ঈদের আগে পড়ে বাড়তি যাত্রী পারিবহনে বিআইডব্লিউটিসি’র তেমন কোন কর্ম পরিকল্পনা নেই বলেও জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে বুধবার সংস্থাটির পরিচালক-বানিজ্য মোঃ আশিকুজ্জামান-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট কিছু না বললেও ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ণ’ জাহাজ দুটি কেবসরকারী খাতে ইজারার দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। ইজারাদারকে নৌযান দুটি ঢাকা থেকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে পরিচালনের শর্ত দেয়ার কথাও জানান তিনি। তবে বর্তমানে সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন চলাচলকারী নিকট অতীতের দৈনিক রকেট স্টিমার সার্ভিসটির চলাচল বাড়বে কিনা সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেন নি।
এদিকে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা, বিআরটিসি’র আসন্ন ঈদে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চল থেকে কোথাও কোন বিশেষ বাস সার্ভিস পরিচালনের মত যানবাহন নেই। সংস্থাটির বরিশাল ডিপোতে বিদ্যমান বাসগুলো দিয়েই বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখি সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের মাওয়া, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা ও সাতক্ষীরা রুটে যাত্রী পরিবহন করা হবে বলে জানা গেছে।