রিকশাচালক বাবার অভাবি সংসার। তিন বেলা খাবারই জুটতো না। আবার পড়ালেখার খরচ। তাই স্কুল আর পড়ালেখার ফাঁকে বাবার রিকশা চালিয়ে কিছু টাকা আয় করতে। যা দিয়ে চলতো সাব্বিরের (১৫) পড়ালেখা।
শেষ পর্যন্ত রিকশা চালানোই যেন তার জীবনে কাল হলো। শনিবার (২ এপ্রিল) ফরিদপুর সদরের ইশান গোপালপুর-নৌমল্লিকের খালপাড় এলাকার একটি ক্ষেত থেকে সাব্বির বিশ্বাসের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে ফরিদপুর পুলিশ।
নিহত সাব্বির ফরিদপুর সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের আছিরুদ্দিন মুন্সিরডাঙ্গী (কালুর বাজার) এলাকার সন্তান।। বাবার আলমগীর, সাজেদা দম্পোতির ২য় সন্তান সে। সাব্বির পদ্মারচর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। মোট চার ভাইয়ের মধ্যে সাব্বির মেজ।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১ এপ্রিল) দুপুরে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় সাব্বির। পরে রাতে বাড়ি না ফেরায় বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে তার পরিবার। শনিবার সকালে একটি ঘাসক্ষেতে সাব্বিরের মরদেহটি দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে।
নিহত সাব্বিরের বাবা আলমগীর বিশ্বাস গণমাধ্যম বলেন, শুক্রবার সকালে আমার সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। সে জানায় তার খাতা-কলম ও স্কুলের সব মিলিয়ে হাজার টাকা লাগবে। শুক্রবার স্কুল বন্ধ, সে রিকশা নিয়ে বের হয়। যা আয় করতে পারে আর বাকিটা আমাকে দিতে বলে। কিন্তু সে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে আর ফেরেনি।
তিনি বলেন, শুক্রবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করি। শনিবার সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ
আহাজারি করে তিনি বলেন, আমার ছেলেও নেই, রিকশাও নেই। আমার সব শেষ। আমার জানামতে আমার কোনো শত্রু ছিলো না।
সাব্বিরের চাচা মো. সোহেল বিশ্বাসগণমাধ্যম কে বলেন,, আমাদের যৌথ পরিবার। সাব্বির পড়ালেখায় খুব মনোযোগী ছিলো। নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে মাঝে মাঝে রিকশা চালাতো। আর এটাই তার জীবনে কাল হলো। ধারণা করা হচ্ছে রিকশা ছিনিয়ে নিতেই তাকে হত্যা করা হয়ছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, খবর পেয়ে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে রিকশাটি ছিনতাই করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য সাব্বির ছাত্র হিসেবে ছিলো খুবই মেধাবী ও বিনয়ী। সাব্বিরের স্কুল শিক্ষক মোঃ হপলাল মাষ্টার ইনকিলাবকে জানান, আমার ছাত্র সে। মাঝে আমার কাছে খাতা ও অংক বই নিয়ে আমার কাছে ছুটে আসতো অংক শিখতে। ঐ সময়টা অন্যান্য বাচ্চার খেলা করলেও সে থাকতে পড়া লেখা নিয়ে।